Bosila , Mohammadpur ,Dhaka | HOTLINE: 09678221410

খেলনা শুধুই 'খেলনা' নয়

খেলনা শুধুই 'খেলনা' নয়

খেলনাপাতির রকমসকম
(Toys for Child Development Stages)

আপনার হয়তো মনে হল, বাচ্চার খেলনার আবার রকমসকম কী? বেশ ভালো মানের, রঙচঙে একটা খেলনা হলেই তো হয়! কিন্তু সেটা নয়, বাচ্চার সামগ্রিক বিকাশ যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়, তা হলে একটু যত্নবান হতেই হবে খেলনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। (Types of Educational Toys) বাড়ন্ত বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কী ধরনের খেলনা আদর্শ এবং তার গুরুত্বই বা কেমন, তারই একটা খসড়া দেওয়ার চেষ্টা করলাম নীচে।



#1. পুতুল: মানুষের চেহারার অনুকরণে তৈরি হয় বলে বাচ্চা হয়তো এই পুতুলের মধ্যেই প্রাণ খুঁজতে চেষ্টা করে। তার মাকে তাকে যেভাবে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায় বা আদর করে, সবকিছুই পুতুলের ওপর ফলাতে চেষ্টা করে পুঁচকিটি।



#2. পাজল গেম: এই ধরনের খেলায় শিশুর বুদ্ধি বাড়ে, মোটর স্কিল উন্নত হয়, সৃজনশীলতা বাড়ে, বাড়ে চিন্তাশক্তি। ধৈর্য এবং একাগ্রতা বাড়াতেও সহায়ক এই পাজল জাতীয় গেম। (Educational Toys For Children)



#3. সফট টয়: না, তুলো ভরা গোলগাল সফট টয়-এর কথা এখানে বলিনি। যদি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান, তবে বাচ্চার জন্য সফট টয় কিনুন একটু ভাবনা চিন্তা করে।
ছোট্ট বাচ্চারা নানা রকম আওয়াজে সাড়া দিতে চায়। বাচ্চার জন্য কিনতে পারেন কথা বলা বা পশু-পাখির আওয়াজ করা সফট টয়। এতে বাচ্চা নানা ধরনের আওয়াজ শোনে বলে তার কৌতূহল বাড়ে। নানা রকম আকারও চেনাতে পারেন সফট টয় দিয়েই। আবার গোলগাল, মিষ্টি দেখতে খেলনাগুলো থেকেই বাচ্চার মনে জন্ম নেয় কাউকে স্নেহ করা, ভালোবাসার মতো বোধশক্তি (Learning Toys)।



#4. অ্যাকটিভিটি টয়:শুধু বসে বসে খেললেই তো হবে না। সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে একটু আধটু শরীর-চর্চাও ভীষণ প্রয়োজন। ইনডোর হোক বা আউটডোর; বাচ্চাদের জন্য বিশেষ কিছু অ্যাকটিভিটি টয় পাওয়া যায়, যেগুলো বাচ্চাকে শরীরের দিক থেকেও শক্ত সমর্থ করে তোলে।
ওকে এনে দিতে পারেন একটা দম দেওয়া ইঁদুর, যাকে ধরতে গিয়ে হামা দিতে দিতে হেঁটেই ফেলবে একদিন। বা একটু বড় হয়ে গেছে, তবে এনে দিন একটা নরম ফুটবল। ছোট্ট পায়ের পেশী ফুলিয়ে মারুক লাথি ময়দানে। এগুলো উদাহরণ দিলাম, আপনি চাইলে অন্য অনেক ধরনের মজাদার খেলনা আনতে পারেন। (Kids Educational Games & Learning Toys) তবে শিশুর সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে খেলনা বাছবেন।



#5. কিডস কম্প্যুটার বা ডিজিটাল গেম: না, আপনার মোবাইলটা ধরে দিতে বলিনি বাচ্চার হাতে। মোবাইল বা ডিজিটাল গ্যাজেটের ওপর বাচ্চাদের ভীষণ আকর্ষণ থাকে।
তাই নামীদামি খেলনা কোম্পানিগুলিও বানাতে থাকে ওই মোবাইল বা কম্প্যুটারের রেপ্লিকা। শুধু বাচ্চার কথা মাথায় রেখেই। প্রি স্কুলারদের জন্য এই ধরনের খেলনা আদর্শ। ছবি ম্যাচ করা, অক্ষর সাজানো, রঙ মেলানো, মজার মজার যোগ-বিয়োগের খেলা বা নানা ধরনের মিউজিক তৈরি করা, সবকিছু এক্কেবারে হাতের মুঠোয়। (Educational Games for Kids)
হয়তো ডিজিটাল পিয়ানোতে সুর তুলে জন্ম নিল গানের ওপর ভক্তি বা ফুলের ছবি চিনতে গিয়ে শখ হল গাছ লাগানোর। উদাহরণ হিসেবে দিলেও, এই অভ্যাসগুলি যে কত ভালো, এ আপনি অস্বীকার করতে পারবেন কি?





বয়স অনুযায়ী খেলনার বাছ-বিচারে আমরা
(Age-by-Age Guide to Toys)

খুব স্বাভাবিক, বয়সভেদে বদলে যাবে বাচ্চার খেলনার ধরন-ধারণ। কিছু টিপস দিলাম আমরা, দোকানে যাওয়ার আগে একটু মিলিয়ে নিন দেখি!

#1. ১-১২ মাস বয়স: একদম ছোট্ট বাচ্চার ক্ষেত্রে যেহেতু আওয়াজ শোনা, কোনও কিছু দেখা বা স্পর্শ এই অনুভূতিগুলিই সবার আগে তৈরি হয়; তাই সেই রকম খেলনাই বেছে নিন আপনার সোনার জন্য। (Choosing Age-Appropriate Toys for Kids) দোলনার ওপরে লাগিয়ে দিতে পারেন টুংটাং আওয়াজ তোলা ঘুরন্ত ঝুমঝুমি, ঝুম ঝুম আওয়াজ তোলা হাতল-ঝুমঝুমি বা নিয়ে আসতে পারেন দম দেওয়া পুতুল। চোখ, কান এই দুই ইন্দ্রিয়ই বেশ সজাগ হতে শুরু করবে কিন্তু। আলো জ্বলা খেলনাও খুব জনপ্রিয় এই বয়সের বাচ্চা-দলের কাছে।
বাচ্চা বসতে শিখলে নিয়ে আসুন রঙিন পাজল, ব্লক বানানো গেম, রিমোট গাড়ি বা চাকা লাগানো কুকুর। যাদের নিয়ে ও হামা দেবে, হাঁটবে এবং বুদ্ধি লাগিয়ে সাজাবে।



#2. ১২-২৪ মাস: এখন বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেছে। ওর জন্য নিয়ে আসুন খেলনা ঠেলা-গাড়ি, ছোট্ট চারচাকা সাইকেল, টগবগে খেলনা ঘোড়া। মোদ্দা কথা, যেসব খেলনায় বাচ্চার শরীরের ওপর ব্যালান্স বাড়বে এবং পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়বে, সেই ধরনের খেলনাই বাছুন। (Best Toys for Kids by Age) আনতে পারেন নাম্বার লেখা ম্যাট, ম্যাচিং গেম বা বিল্ডিং ব্লকস-এর মতো গেমও।



#3. ২ বছর ও তার বেশি: বাচ্চা আর কিছুদিন পরেই স্কুলে যাবে। বাচ্চাকে বুদ্ধিদীপ্ত এবং অ্যাকটিভ করে তুলতে ঘরে আনতে পারেন ছোট্ট ফুটবল, লাগিয়ে দিতে পারেন ছোট্ট বাস্কেটবল হুপ। তিনচাকা সাইকেলও দিব্যি ভালো হবে আপনার খুদের জন্য। (Smart Toys for Every Age)
স্যানড পেপার কিনে আনুন এবং বাচ্চার সাথে মজাদার খেলায় মেতে উঠুন। কিনে দিন রং, পেপার, ছবি আঁকার সরঞ্জাম। নানা রকম ছবির বইকেও বাচ্চার খেলনার আওতায় ফেলাই যায়। এগুলো তো কয়েকটা সাধারণ উদাহরণ রইল, বাজারে নামীদামি কোম্পানির তৈরি অনেক ধরনের উন্নত মানের খেলনা পাওয়া যায়, যা বাড়ন্ত বাচ্চার সার্বিক বিকাশে সহায়ক। খেলনার রাজ্যে অপশন অনেক, তবে আপনাকে বেছে নিতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে।



বাচ্চাকে সবসময় নজরে রাখুন। খেলনা বাচ্চার জন্য সুরক্ষিত কি না, সেটা বিচার করেই খেলনা কিনুন। খেলনা ভেঙে বা খেলনার কোনও অংশ বাচ্চার মুখে গিয়ে যাতে বিপদ না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকুন। (How Do Educational Toys Benefit A Child?) যে কোনও রাইড জাতীয় খেলনায় বাচ্চাকে চাপালে নিজে পাশে থাকুন।

খেলতে খেলতে জীবনের পাঠ শিখিয়ে দিন বাচ্চাকে। যেমন, বাড়িতে সাইকেল চালানোর সময় মাথায় পরিয়ে দিন ছোট্ট একটা সাইকেল-হেলমেট। ভবিষ্যতে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শিশু সচেতন হয়ে উঠবে এভাবেই। শিশুকে খেলনা কিনে দিন ইচ্ছেমতো, তবে একটু বাছাই করে আর আগু-পিছু ভেবে। কোনও খেলনাতে যেন শিশু বেশি আকৃষ্ট না হয়, খেয়াল রাখুন সেদিকেও। (The Benefits of Educational Toys and Play)